উড়নচন্ডী আর উলুখাগড়া এক নয় |
গুগলে উলুখাগড়ার টিকি খুঁজে পাওয়া যাবে
না |
তবে ইতিহাস বই ঘাঁটলে উলুখাগড়াদের সম্পর্কে কিছু ধারণা পাওয়া যায় |
অষ্টম শ্রেণীর ইতিহাসের ছাত্রকে উলুখাগড়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে বলবে — উলুখাগড়া মানে দাবার বোড়ে |
মুখোমুখি যুদ্ধে এদের এগিয়ে দেওয়া হত |আর বিপক্ষের আক্রমণের সব ঝড় – ঝাপটা
এদের উপরেই এসে পড়ত |
হাজারে হাজারে এরা মারা যেত |তখন থেকেই মুখে মুখে চালু হয়ে যায় — রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলুখাগড়ার প্রাণ যায় |
বলতে গেলে সেই সময় এদের হাতে নামমাত্র অস্ত্র থাকত | একটু আধটু তীর চালানো এদের শেখানো হত | আর শেখানো হত তরবারি চালানো |
গ্রামের জমিদারদের মাধ্যমে এদের সৈন্যবাহিনীতে অস্থায়ী ভাবে নিযুক্ত করা হতো |
যুদ্ধ শেষ হলে এরা গ্রামে ফিরে আবার চাষবাসে মন দিত |
মুঘল বাদশাহ ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর অওধ এবং বেনারস স্থায়ী সৈন্য হিসেবে ” ইনফ্যান্ট্রি ”
বা ” পায়দল ” সৈনিকদের নিয়োগ করতে শুরু
করে |
এই দুটি ভারতীয় রাজ্য থেকে শিক্ষা নিয়ে
ইংরেজরা সিপাহী বা পায়দল সৈনিক
নিয়োগে বেশী জোর দেয় আর অশ্বারোহী বাহিনীর গুরুত্ব কমিয়ে দেয় |
এই রকম একজন সিপাহী ছিলেন
মঙ্গল পান্ডে |
যাই হোক, ইংরেজরা এই পায়দল সৈনিকদের হাতে এক ধরনের ভারী বন্দুক, যার নাম মাস্কেট, এবং ম্যাচলক, যে বন্দুকে বারুদ গুঁজে আগুন জ্বালিয়ে ছোঁড়া হত, তুলে দেয় |
এই পায়দল সৈনিকরা হয়ে ওঠে ইংরেজ বাহিনীর প্রধান শক্তি |
দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে উলুখাগড়া শব্দটির অর্থ সঙ্কোচন ঘটে |
উলুখাগড়া অর্থে আগে বোঝাত সেনাবাহিনীর অগ্রগণ্য বাহিনী বা পায়দল বা পদাতিক বাহিনী |
স্বাধীনতার পরে উলুখাগড়ার অর্থ বদলে দাঁড়ায় রাজনৈতিক দাদা – দিদিদের সেই বাহিনী , যারা বিপক্ষ দলের সমর্থক – কর্মীদের বাড়িতে আগুন জ্বালায়, বোমা ছোঁড়ে, মারধর করে, গুলি চালায় |মিছিলে ভিড় করে | স্লোগান তোলে |
আর তা করতে গিয়ে নিজেরা মার খায়, আহত হয়, কেস খায়, জেল খাটে কিংবা খুন হয় বা খুন করে |
এক কথায় যারা নেতা – নেত্রীদের নির্দেশে
মারে অথবা মরে |
আর নেতা – নেত্রীরা তাদের মৃতদেহ নিয়ে মিছিল করে
রাজনৈতিক ডিভিডেন্ড তুলে নেন |
আর সাধারণ মানুষ এ সব দেখেই বলেন — রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলুখাগড়ার প্রাণ যায় |
কাল দ্বিতীয় কিস্তি |