বিজ্পুরের রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হওয়ার জন্যই কি ফাউলের পর ফাউল করে চলেছেন মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশু রায় ?
সর্বশেষ ফাউলটি করেছেন ১৫ অক্টোবর ।
এই দিন বেলা বারোটা নাগাদ তিনি নিজের ফেসবুক পেজে লেখেন— রাজনীতি থেকে স্বেচ্ছা অবসর নিলে কেমন হয়?
এর পরদিন মানে আজ সকাল ১০- টায় সাংবাদিক সম্মেলন ডাকেন । আর তা বাতিলও করে দেন ১৫ অক্টোবর রাত বারোটার কিছু আগে । তবে নিজের ফেসবুক পেজ থেকে ১৬ অক্টোবর দুপুরেও ওই পোস্টটি সরাননি ।
অবশ্য ১৬ অক্টোবর দুপুর ১- টার পরে নিজের ফেসবুক পেজে
আর একটি পোস্ট করেন । সেখানে লেখেন— রাজনীতি থেকে অবসর নেব কি নেব না, তা ভবিষ্যতই বলবে । কিন্তু, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মানুষের সেবা করে যাব । জনসেবার মধ্যে দিয়েই মানুষের মধ্যে থেকে যাব । কারণ মানুষের মধ্যেই নারায়ণ বর্তমান । যেই নারায়ণ, সেই জগন্নাথ, সেই রাম ।
মানে রামনাম সত্য হ্যায় ।
মানে বিজেপি ছাড়তে চেয়েছিলাম, কিন্তু এখন ছাড়ছি না ।
তবে ভবিষ্যতে ছাড়তেও পারি । কিন্তু, জনসেবা করে যাব । মানে রাজনীতি ছাড়ব না ।
রাজনীতি- করিয়েরা শুভ্রাংশুবাবুর এই শপথের পিছনে রেফারির ছায়া দেখতে পাচ্ছেন । বলছেন, ফাউল করে রেফারির ধমক খেয়ে এখন রামনাম উচ্চারণ করছেন বিধায়ক ।
তাঁরা বলছেন,শুভ্রাংশুবাবুর মধ্যে স্পোর্টসম্যান স্পিরিটের অভাব ছিল না । তাঁর বাবাকে যখন তৃণমূলে কোণঠাসা করা হচ্ছিল, তখন তাঁকেও রেয়াত করা হয়নি । তাঁর বাবা তৃণমূল ছাড়ার পরে তাঁকেও স্থানীয় তৃণমূল নেতা- কর্মীরা জোট বেঁধে একেবারে একঘরে করে দিয়েছিলেন । মঞ্চে তাঁকে বসিয়ে রেখেই তাঁর বাবা মুকুল রায়কে গালাগালি করার ধৃষ্টতাও নিজের স্পিরিট ধরে রেখে তিনি সহ্য করেছেন । সেই সময় একদিন তিনি আমাকে বলেছিলেন— একদিন এরা ভুল বুঝতে পারবে । আমাকে মাথায় তুলে নেবে । হলও তাই । লোকসভা নির্বাচন এগিয়ে আসতে লাগল । এরপরই তৃণমূলের সভা গুলোতে তাঁকে দীনেশ ত্রিবেদী আর পার্থ ভৌমিকের সঙ্গে দেখা যেতে লাগল । লোকসভা নির্বাচনে দল তাঁকে বিজপুরের দায়িত্ব দিল । তারপরে সেই প্রেস কনফারেন্স ।
সেই কনফারেন্সে তিনি বললেন,
” শুভ্রাংশু রায় তৃণমূল থেকে বিজেপিতে সেদিনই যাবে , যেদিন বিজেপি বিজপুরবাসীর জন্য হালিশহর কোচ ফ্যাক্টরির দরজা খুলে দেবে। ”
তারপর নির্বাচনে বিজপুরে তৃণমূল হারল । হারল বারাকপুর লোকসভায় । কেন্দ্রে বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার তৈরী হলো । কিন্তু হালিসহর কোচ ফ্যাক্টরি আর হলো না। শুভ্রাংশু তার কথা না রেখেই বিজেপিতে যোগদান করলেন। মানে তিনি ফাউল করা শুরু করলেন । লোকসভা নির্বাচনে তাঁর ভূমিকা নিয়ে মুখ ফসকে এমন কথা বললেন, যে বোঝা গেল তিনি নিজের স্পোর্টসম্যান স্পিরিট হারিয়ে ফেলেছেন । আর এরপর থেকে ফাউল করেই যাবেন ।
নীতি- নৈতিকতার প্রশ্নে দাঁড়িয়েও উনি বিশ্রী ফাউল করলেন ।২০১৭ – তে মুকুল রায় যখন তৃণমূল ত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দিলেন, তখন তিনি রাজ্যসভার পদ ত্যাগ করেই বিজেপিতে গেলেন । কিন্তু এখানে শুভ্রাংশ তা করলেন না। উনি তৃণমূলের টিকিটে জেতা বিধায়ক – পদ কাছে রেখেই বিজেপিতে যোগ দিলেন। এই সময়ে দাঁড়িয়ে উনি বাবার পথ অনুসরণ করতে পারলেন না।
এখানে দাঁড়িয়েও তাঁর ‘বাঘের বাচ্ছা, বাঘ” হয়ে
ওঠা হোল না।
তবে কাগজে- কলমে তৃণমূলের বিধায়ক থাকলেও তিনি বিজেপি হয়ে উঠলেন ।
বাংলার রাজনীতিতে গদ্দার শব্দ সোনা গিয়েছিল অর্জুন সিং-এর মুখ থেকে। মঞ্চে শুভ্রাংশুর উপস্থিতিতে অর্জুন, জ্যোতিপ্রিয়রা মুকুল রায়কে গদ্দার -বেইমান তকমা দিয়েছিলেন । বিজেপিতে গিয়ে সেই অর্জুনের হাত ধরলেন মানে আবার একবার ফাউল করলেন শুভ্রাংশু।
নীতি নৈতিকতার প্রশ্নে দাঁড়িয়েও শুভ্রাংশুকে মানুষ কিছুটা আড় চোখে দেখছে।
তিনি মুখে যাই বলুন,২০১৯ – এর ভোটে তিনি সর্বশক্তি দিয়ে বিজেপিকে হারানোর চেষ্টা করে গেছিলন । ২০১৯ -এর ভোটে দীনেশ ত্রিবেদীকে সঙ্গে নিয়ে পুরো বিজপুর ঘুরে বেড়িয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থীকে ফাঁদে ফেলার জন্য। কিন্তু তা হয়নি । এখন সেই বিজেপির সঙ্গেই তাঁকে ঘর করতে হচ্ছে।
গদ্দারের পরিভাষা মনে হয় তাঁর কাছে এখন অন্য ভাবে ধরা পড়েছে।
নাকি নিজেই নিজের কাছে ধরা পড়ে গেছেন । আর আর তা আড়াল করতেই ভাবছেন, স্পোর্টসম্যান স্পিরিটের দরকার নেই,বরং মেরে খেলে দৃষ্টি আকর্ষণ করে খেলা অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিতে পারবেন । আর তাই বারবার ফাউল করছেন, বলছেন — আগে বদলা, তারপরে বদল ।