প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের দাপট যতই বেড়ে চলেছে , কাঁচরাপাড়ার ময়দান থেকে ততোই লুপ্তপ্রায় প্রাণীদের মতো বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বিজপুরের তৃণমূল কংগ্রেস।
প্রথম দিকে কয়েকজন নেতানেত্রীকে সোশ্যাল মিডিয়াকে ডেকে নিয়ে এসে মাক্স বিতরণ করতে দেখা গিয়েছিল। দিন যত এগিয়েছে সেই দৃশ্য তত ফিকে হয়েছে।
কয়েক দিন দেখা গেল, একজন দু’জন নেত্রী কোন এক সোশ্যাল মিডিয়ার স্টুডিওতে অসহায় মানুষ গুলোকে ডেকে এনে চাল ও আলু দিচ্ছে। এই দৃশ্য দেখে বীজপুরের অনেক সুধীজনেরা সেদিন প্রশ্ন তুলেছিলেন —- এ আবার কেমন দান? স্টুডিওতে অসহায় মানুষ গুলোকে ডেকে এই লোকহিতের কোন অর্থই হয় না।
কাঁচরাপাড়ার নামজাদা নেতাদের সেই ভাবে ত্রাণের ময়দানে দেগা গেল না। কোন কোন কাউন্সিলরকে টুকটাক ক্যামেরার সামনে দেখা গেছে |তাও আবার তার পিছনে রয়েছে এক ঠিকেদার ব্যাবসায়ীর হাত।
কমিউনিটি কিচেনের মাধ্যমে নিরন্ন, অসহায় ও অভূক্ত মানুষেদের খাওয়ানোর কোনো উদ্যোগ দেখা গেল না তৃনমূল নেতাদের মধ্যে।
পর্যবেক্ষক পদমর্যাদার এক নেতা ত্রাণ পাঠিয়েছিলেন কয়েকটা ওয়ার্ডে | তবে তা খুবই সামান্য।
সেই তুলনায় অনেক এগিয়ে হাপন। লক আউটের প্রথম দিন থেকেই তাঁকে ময়দানে সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে। প্রতিদিনই প্রায় ২৫০-৩০০ মানুষের কাছে তিনি পৌঁছে দিয়েছেন খাদ্য ও সামগ্রী। কোন মানুষের খাদ্য নেই বা অভূক্ত রয়েছেন, এমন খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে যাচ্ছে। তবে এটা সম্পূর্ণই তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগ।
যেভাবে পৌর এলাকাকে স্যানিটাইজ করা দরকার ছিল, সেরকম কাঁচরাপাড়ায় চোখে পড়েনি। স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিষয়টিও অতলে। বাড়তি উদ্যোগ নিয়ে এলাকা পরিষ্কার পরিছন্ন করার উদ্যোগ দেখা যায়নি কাউন্সিলরদের মধ্যে।
সেই তুলনায় অনেক এগিয়ে নৈহাটি। দিনমজুর ও হতদরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষদের দুর্বিষহ অবস্থার কথা চিন্তা করে আলোকমালার অপূর্ব দীপ্তির মতো নিরন্ন অভূক্ত মানুষ গুলোর মুখে খাবার তুলে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন পার্থ ভৌমিক।
এই বিপদের সামনে দাঁড়িয়ে পার্থ ভৌমিক দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেছেন —,-” আমাকে যাঁরা ভোট দিয়েছেন বা দেননি, প্রত্যেকেই আমার বৃহত্তর পরিবারের অংশ। আমি যতদিন বিধায়ক আছি আমার এলাকার একজনও অনাহারে মারা যাবে না। আপনি সিপিএম, বিজেপি ও কংগ্রেস হলেও আমাকে ফোন করুন। আপনার মুখে খাবার তুলে দেওয়ার দায়িত্ব আমার। ”
তাঁর এই ঘোষণার পরই সারা নৈহাটি বিধানসভা জুড়ে শুরু হল মানবধর্ম পালনের এই মহাযজ্ঞ।
প্রতিদিন শহর ও গ্রাম মিলিয়ে ১৭,০০০-১৮০০০ অভুক্ত মানুষের মুখে অন্ন উঠছে। এই বিরাট কাজ নৈহাটি শহরে অশোক চ্যার্টাজী ও সনৎ দে এবং গ্রামে রবি নিয়োগীর দক্ষতায় সুসম্পন্ন হচ্ছে।
শুধু রান্না করা খাবারই নয়, বিভিন্ন জায়গায় পর্যাপ্ত পরিমান অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সামগ্রী পৌঁছে গেছে বিধায়কের নির্দেশে।
মানুষ অসুবিধায় পড়লেই ফোন করছেন পার্থ ভৌমিককে। সাথে সাথে বিধায়ক বা তাঁর দলের নেতারা পৌঁছে যাচ্ছেন । নৈহাটির সাধারণ মানুষ বলছেন, বিধায়কের এই রূপ আগে তাঁরা কখনও দেখেননি।