অবস্থানমঞ্চে অগুনতি নেতা- নেত্রীর বসে থাকা দেখে তৃণমূল বিধায়ক পার্থ ভৌমিক হাঁপিয়ে উঠছিলেন । শেষে বলেই ফেললেন , এতো জনের নাম বলতে পারছি না । এতো নেতা- নেত্রী দেখে সেপ্টেম্বরের এই সভায় বিরাট উচ্ছ্বাসও প্রকাশ করে ফেললেন বর্তমানে দলের পক্ষে বিজপুর বিধানসভার দায়িত্বে থাকা জেলা তৃণমূলের অন্যতম কো- অর্ডিনেটর, পরিষদীয় সচিব এবং বিধায়ক পার্থ ভৌমিক ।
মঞ্চে ছিলেন জেলা তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক সুবোধ অধিকারী । তাঁর ক্ষমতা বোঝা যায় তাঁর নিরাপত্তার বহর দেখে । তাঁকে সব সময়ই ঘিরে রাখে সাফারি- সুট পরিহিত ৯-১০ জন দেহরক্ষী ।
মঞ্চে বসে- থাকা বাকি নেতা- নেত্রীদের প্রায় প্রত্যেকের সঙ্গেই ঘোরে এক থেকে তিন জন বডিগার্ড । যাদের নেই, তারা পাওয়ার জ্ন্যে জান লড়িয়ে দিচ্ছেন । এঁরা প্রত্যেকেই প্রচারপ্রত্যাশী ।
প্রায় প্রত্যেকেই প্রচারের জন্য পয়সা খরচ করেন । বিভিন্ন নিউজ পোর্টালে এদের মুখ ঘন ঘন দেখা যায় ।
এঁরা প্রত্যেকেই বিজ্পুরের বিধায়ক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন । এঁরা প্রায় প্রত্যেকেই শহর তৃণমূল বা যুব তৃণমূলের সভাপতি হতে চান । এদের বেশির ভাগ গত ১০ বছরে বেহিসেবি বহু স্থাবর- অস্থাবর সম্পত্তির মালিক হয়েছেন । এদের কামাইবাজি দেখে শহরবাসির চোখ কপালে উঠেছে । তবুও এঁরা দলকে সামনে রেখে আরও কামাতে চান ।
কিন্তু সেজ্ন্য তো দলকে নির্বাচনে জেতাতে হবে । দল দেহরক্ষী দিয়েছে । দল পয়সা কামানোর সুযোগ করে দিয়েছে । দল ক্ষমতা দিয়েছে । দল ঝা চকচকে গাড়িতে চড়ার সুযোগ করে দিয়েছে । দল দুবাই- ব্যাঙ্ককে ঘুরতে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে ।
সামনের বিধানসভা নির্বাচনে বিজ্পুরে দলের প্রার্থীকে জেতাতে পারলে এই সব সুযোগ আবার হাতের মুঠোয় আসতে পারে ।
কিন্তু, গত লোকসভা নির্বাচনে এবং নির্বাচনের পরে এঁরা ডাঁহা ফেল করেছেন । বিজ্পুরে দল হেরেছে । আর ২৩ মে ফল বেরনোর ঘন্টা খানেকের মধ্যে ভয়ে এঁরা বিজেপিতে লাফ মেরেছেন । অতি ভীতুরা দিল্লির বিজেপি দফতরে বা অর্জুন সিং-এর বাড়িতে গিয়ে নিজেদের দেহ এবং মন সমর্পণ করেছেন । লোকসভা নির্বাচনের ফল বেরনোর পরে পার্থ ভৌমিককে ফোন করে পাননি দলের নেতা- কর্মীরা । কর্মীদের অভিযোগ, বিধায়ক, পরিষদীয় সচিব এবং সেই সময় জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি হওয়া সত্বেও সেই ” বিপদের সময়ে ” পার্থ ভৌমিক ফোন বন্ধ করে রেখেছিলেন ।
সিপিএম প্রার্থী তড়িত তোপদার ২০০৯- এর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদীর কাছে হেরে যাওয়ার পরে বিজ্পুরের সিপিএম নেতা- কর্মীরা অবশ্য ফল বেরনোর দিনই এই ভাবে ভয়ে দলত্যাগ করেননি । যারা দলত্যাগ করেছিলেন, করেছিলেন ২০১০ – এ ।
২০২১- এর বিধানসভা নির্বাচনের দিন ঘোষণার পরে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে রাজ্যের অনেক তৃণমূল নেতা- নেত্রীর মতো বিজ্পুরের নেতা- নেত্রীদের দেহরক্ষীও তুলে নেওয়া হতে পারে । যেভাবে রাজ্যপাল পয়েন্ট বাড়িয়ে চলেছেন,তাতে বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না । নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হলেই রাজ্য পুলিশ- প্রশাসনও চলে যাবে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে । পাশে থাকবে না থানা,পুলিশ ও প্রশাসন ।
এই রকম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে লোকসভা নির্বাচনে ডাঁহা ফেল করা বিজ্পুরের নেতা- নেত্রীরা কী করবেন?
এই প্রশ্নের উত্তর একটাই— ২০১৯- র ২৩ মে লোকসভা নির্বাচনের ফল বেরনোর পরে এরা যা করেছিলেন, তাইই করবেন ।
এর পরেও উঠে আসতে পারে আর একটি প্রশ্ন, টিম প্রশান্তকিশোর তাহলে কী করলেন?
উত্তর, তিনিও ফেল করেছেন অথবা বিজ্পুরকে হিসেবের বাইরে রেখে দিয়েছেন ।
যদি না রাখতেন, তাহলে নির্বাচনের এই ৬ মাস আগে বিজ্পুরের নেতা- নেত্রীদের দেহরক্ষী ছেড়ে দিয়ে মানুষের সঙ্গে মিশে যাওয়ার পরামর্শ দিতেন । কারণ,দেহরক্ষী – কালচার মানুষ পছন্দ করছেন না । কেননা এই জ্ন্যই বিজ্পুর-তৃণমূল
মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে ।
শেষ প্রশ্ন,সুবোধবাবু কিছু করতে পারবেন না?
উত্তর,এই রকম ভীতু- লোভী- প্রচারসর্বস্ব নেতা- নেত্রীদের নিয়ে নেত্রীও ফেল করতেন ।
অবশ্য , ২০১৯- র লোকসভা নির্বাচনের সময়ে তিনি বিজেপিতে থাকলেও প্রচারে তাঁকে সে ভাবে দেখা যায়নি । আর এখন তো তিনি বাঘের পিঠে চেপে বসেছেন ।