দু হাজার সতেরোর শুরু থেকেই তৃণমূলে কোণঠাসা হতে হতে মুকুল রায় জর্জ ফ্লয়েডের মতোই বারবার বলে চলেছিলেন — দমবন্ধ করা পরিস্থিতি… আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না |
তাঁর ঘনিষ্ঠ অনুগামীরাও তাঁর প্রতি তাঁরই প্রতিষ্ঠিত দলের এই অবিচার মেনে নিতে পারছিলেন না |
তাঁরা বুঝতে পারছিলেন, এই দমবন্ধকরা দল থেকে মুকুলবাবু বেরিয়ে না আসলে তিনি ক্রমশ রাজনৈতিক আত্মহত্যার দিকেই এগিয়ে যাবেন |
মুকুলবাবুকে দেওয়ালে ঠেসে ধরা হয়েছিল |
কিন্ত, কঠিন পিচে তিনি ধরে খেলতে শুরু করলেন |
এক পা এক পা করে দু পা পিছোলেন | দলের সমস্ত পদ থেকে ইস্তফা দিলেন | রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিলেন |
ছেড়ে দিলেন রাজ্যের দেওয়া নিরাপত্তা |
সবাই ভাবলেন, রাজনৈতিক বাণপ্রস্থ নিতে চলেছেন তিনি |
আর তার পরেই এক পা এগোলেন |
যোগ দিলেন বিজেপির মতো সর্বভারতীয় দলে |
তৃণমূল মহাসচিব পার্থবাবু তাঁর উদ্দেশে ছুঁড়ে দিলেন তীব্র কটাক্ষ, বললেন ” কাঁচরাপাড়ার ক্যাঁচড়া “, কখনও বললেন ” কাঁচরাপাড়ার কাঁচা ছেলে ” |
তিনি পাল্টা আক্রমণে না গিয়ে পঞ্চায়েত আর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে ঘোল খাইয়ে ছেড়ে দিলেন |
ভীত তৃণমূল বিধানসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করে ভাড়া করে ফেলল ভোটগুরু প্রশান্ত কিশোরকে |
এদিকে রাজ্য বিজেপির গোষ্ঠী পাটীগণিতে তিনি সংখ্যালঘু হয়ে পড়লেন |
সেই তৃণমূলের মতো এই বিজেপিতেও তাঁকে কোণঠাসা করা শুরু হল |
কিন্ত, অভিজ্ঞতা তাঁকে বলল, কন্ঠ ছাড়ো জোরে |
তিনি তাই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে বললেন — হয় আমাকে কাজ দাও, সম্মান দাও, না হলে ছেড়ে দাও |
দিদির কাছে সে খবর গেল | তিনি তাঁর এক বিশ্বস্ত প্রাক্তন সাংসদ – সাংবাদিককে মুকুলের কাছে
পাঠালেন |
লোভনীয় অফার ছুঁড়ে দিলেন সাংবাদিক |
তিনি বললেন, ভাবতে সময় দিতে হবে |
আর সর্বভারতীয় বিজেপি নেতারা বুঝলেন আর দেরি করলে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ক্ষমতার পুষ্টিকর তৈলবীজ কাঁচাই থেকে যাবে, 2021 – এ পেকে উঠবে না |
অতএব মুকুলকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ দফতর দিতে হবে |
মুকুলবাবুকে তাঁর পছন্দের দফতরের কথা জিজ্ঞেস করা হল | তিনি চাইলেন পেট্রোলিয়াম দফতর |
কিন্ত, বিজেপি নেতারা দেখলেন, মুকুলবাবুকে কয়লা দফতর দেওয়া হলে দল লাভবান হবে |
আগামীকাল না হলেও খুব শীঘ্রই দেশের প্রাক্তন রেলমন্ত্রী দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণে নিযুক্ত হতে চলেছেন |
আর কাঁচরাপাড়াr ইতিহাসের মুকুটে যুক্ত হতে চলেছে আর একটি পালক |