লক ডাউন পরবর্তী পরিস্থিতিতে “শ্রমজীবী ক্যান্টিন” আলোচনার অন্যতম বিষয় হয়ে উঠেছে । এই সব ক্যান্টিনে গরিব মানুষ ২০ টাকার বিনিময়ে এক বেলা পেট ভরে ভাত খেতে পারছেন ।
তবে পয়সা দিয়ে ক্যান্টিন নয়, হালিশহরের ছেলে সুদীপ্ত দাস আজ থেকে ২ বছর আগে ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ – য় একেবারে বিনে পয়সায় একবেলা (মধ্যাহ্নভোজ) একশো মানুষকে একসঙ্গে বসিয়ে পাতপেড়ে পেটভরে খাওয়ানোর জন্য শুরু করে ” রামধনু হেঁসেল “।
সকালে টিকিট দিয়ে দেওয়া হতো এবং সেই টিকিট গ্রহীতাদের দুপুরে বসিয়ে পাত পেড়ে খাওয়ানো হতো। তার পরেও কেউ এলে তাঁকেও ফিরিয়ে দেওয়া হতো না । স্থানীয় হোটেল থেকে খাবার নিয়ে আসা হতো ।
বহু মানুষ এগিয়ে এসে এই মহৎ কাজের সঙ্গে নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছিলেন । এই হেঁসেল সামাজিক স্বীকৃতিও পেয়ে যায় । আর তাই জন্মদিন, অন্নপ্রাশন, বিবাহবার্ষিকী, শ্রাদ্ধানুষ্ঠান-এর মত সামাজিক অনুষ্ঠানের মঞ্চ হয়ে ওঠে “রামধনু হেঁসেল”।
এই সব অনুষ্ঠানের দিন গুলিতে মেনুতে বদল তো হতোই । অনুষ্ঠান না থাকলেও কোনো দিন মাছ, কোনো দিন ডিম, কোনো দিন পনিরের মতো আইটেম মেনুতে রাখা হতো। দূর দূরান্ত থেকে বহু গরিব মানুষ সকাল সকাল হেঁসেলে এসে হাজির হতেন ।
টানা ৪৭১ দিন চলার পর রাজনীতির টানাপোড়েনে এই রকম মহৎ একটা কর্মকান্ড বিজপুরবাসী হারিয়ে ফেলেন । ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯- এ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় এই হেঁসেল।
নেটিজেনরা বলেন , ভালো কাজে রাজনীতি করতে নেই । কিন্তু যে কাজটি বলতে গেলে সারা পশ্চিম বাংলায় প্রথম, বিনা পয়সায় খাওয়ানো, যেটা এর আগে পশ্চিম বাংলায় হয়নি, সেই পালকটা আজ কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। যে সব মানুষজন তাঁদের আবেগ আর ভালোবাসা দিয়ে হেঁসেল চালিয়ে যাওয়ার জন্য এগিয়ে এসেছিলেন , তাঁদের ওই সামাজিক কর্মকান্ড গুলো আজ কোথায় যেন অপমানিত বোধ করছে।
লক ডাউন যদি ১৩ কোটি মানুষের চাকরি কেড়ে নিয়ে থাকে,তবে বহু আগে আমাদের এই বাংলায় নষ্ট- ভ্রষ্ট রাজনীতি ১০০ জন গরিব মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়েছে ।