- পার্ক সার্কাসের ব্রিজের নীচে সব্জি বিক্রি করে, পুকুর পরিষ্কার করে, পরিচারিকার কাজ করে তিল তিল করে জমিয়েছিলেন টাকা। সেই অর্থেই গড়ে তুলেছেন দাতব্য হাসপাতাল । সেই মাকেই পদ্মশ্রী সম্মান তুলে দিলেন রাষ্ট্রপতি।
বিয়ে হয়ে গিয়েছিল ১২ বছর বয়সে । ২৩ বছর বয়সে উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে হারাতে হয়েছিল স্বামীকে। ১১ বছরের দাম্পত্য জীবনে কোলে এসেছিল চার সন্তান। স্বামীর মৃত্যু শোক বড়শোক। সেই শোক সামলাবেন নাকি ৪ সন্তানকে মানুষ করবেন।
এই প্রতিকুল পরিস্থিতেও ভেঙে পড়েনি সুভাষিনী দেবী। দৃঢ় সংকল্প নিয়েছিলেন চোখের সামনে আর কোনো ব্যক্তিকে যাতে প্রান খোয়াতে না হয়। মনে মনে পন করলেন হাসপাতাল গড়বেন। সেই হাসপাতালে গরিবের চিকিৎসা হবে বিনা পয়সায়।
৭৩ বছর বয়সী সুভাষিনী মিস্ত্রির লড়াই শুরু হয়েছিল সেই অর্ধ শতক আগে থেকেই। তিনি এমন একজন মা, যিনি মানবকল্যানের স্বার্থে বাজি রেখেছেন গোটা জীবন । লোকের বাড়ি বাসন মেজেছেন, সব্জি বিক্রি করেছেন,দিন মজুরি করেছেন। মাথা নত করেছেন সারা জীবন মাথা উঁচু করে বাঁচবেন বলে। যে টুকু উপার্জন করেছেন, সিংহ ভাগটাই চলে গেছে হাসপাতাল তৈরীর কাজে।
সালটা ১৯৯৩, জমানো টাকায় হাসপাতাল বানানোর জন্যে শহরের বাইরে ১ বিঘা জমি কিনে ফেলেন সুভাষিনী দেবী। অনেক কম দামে। জায়গাটি কলকাতার অনেক কাছাকাছি একটি গ্রামে হাঁস পুকুর। সবসময় সেই নীচু জায়গায় জল জমে থাকে। পুরো জলা জায়গা সুভাষিনী দেবী নিজে মাথায় ঝুড়ি দিয়ে মাটি ফেলে সেই জায়গায়টিকে বাসযোগ্য করেছেন। ১৯৯৬ সালে সেখানে গড়ে ওঠে হাসপাতাল। এটি এমন একটি হাসপাতাল যেখানে রোগীকে সামান্য অসুখের জন্য কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করতে হয় না। সবই একজন মায়ের পরিশ্রমের ফল। সেই মা আর কেউ নন, হাঁস পুকুরের সুভাষিনী মিস্ত্রি।
স্বপ্নকে উড়ান দিতে এক টাকা, দুটাকা করে জমিয়ে ১০ হাজার টাকা দিয়ে জমি কিনেছেন । গ্রামের মানুষের কাছে ৯২৬ টাকা চাঁদা তুলেছেন। কাদামাটি,বাঁশ, টালি দিয়ে গড়েছেন হাসপাতাল। সন্তান দের মানুষের মতো মানুষ করেছেন। বড় ছেলে অজয় পড়াশোনা করেছেন অনাথ আশ্রম থেকে। সেই অজয় আজ মায়ের হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসক। বর্তমানে ডাক্তারের সংখ্যা ১২ জন, ৪৫টি বেড রয়েছে।একই সঙ্গে রয়েছে ১০টি আই সি ইউ। বর্তমানে হাসপাতাল বড় করার জন্য অনেকেই এসেছেন। আরো জমি কেনা হচ্ছে । নতুন ভাবে বিল্ডিং গড়ে উঠছে। সবই এক অসহায় মায়ের স্বপ্ন। সেই মহিয়ষী মায়ের হাতে পদ্মশ্রী।