মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন শুনলাম,অমিতকে বলেছি চাইলে সরকার ভেঙে দাও। অমিত বলেছেন নির্বাচিত সরকার ভাঙবে কি করে?ওনারা প্রতি নিয়ত এম এল এ কেনাবেচা করেন। ভারতের মানুষ দেখছে-শুনছে। এগুলো কোনোটাই সাংবিধানিক ভাবে বলা কথাবার্তা নয়। দক্ষিণপন্থীরা শাসক শ্রেণীর প্রয়োজনে দল চালায়। নতুন নতুন রুপ ধরে।তাই মনে রাখা দরকার যেগুলি।
আজ বিধান সভায় নিজেই স্বীকার করলেন সিঙ্গুরের জমিতে কেউ চাষ করতে চাইছেনা না । এই স্বীকারোক্তিতে প্রশান্ত কিশোরের টিপস আছে কি না জানিনা । তবে একটা কথা সত্যি যে অনেক দিন বাদে মমতা একটা সত্য কথা বললেন । না বলে উপায়ও ছিলনা । তাঁর আদরের সিঙ্গুর ১৬ হাজার ভোটে হারিয়েছে তৃণমূলকে। কানমলা নয়, কান ধরে ওঠ বোস করানো যাকে বলে। সেটাই করেছে সিঙ্গুর, অনেক ব্যথা বুকে নিয়ে ।
সিঙ্গুর ভাঙিয়ে তাঁর মসনদে যাওয়া । আর ২০২১এ তাঁর final exit এর আগে এই স্বীকারোক্তি মনে করায় অনেক নির্মম সত্যি। তাপসী মালিকের বাবা আজ তৃণমূল বিদ্বেষী । কেন ? তৃণমূলের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য আজ মমতার নাম শুনলেই চটে যান। কেন ? সিঙ্গুর আন্দোলনের লড়াই করা চাষীরা আজ দোকানে বাজারে প্রকাশ্যে গাল পাড়েন তাঁকে। কেন ? এই এত কেনর উত্তর খুঁজেছে সিঙ্গুর। লোকসভায় ১৬ হাজারের deficit তারই output. ২ টাকা কেজি চাল দিয়ে manage করতে গিয়েছিলেন ক্ষোভ । হয়নি। সিঙ্গুর বুঝতে শিখেছে নিজের ভালটা। খেয়াল করে দেখুন যে সিঙ্গুর তাঁকে মসনদে চাপিয়েছে সেই সিঙ্গুরের মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছেন এখন মমতা। নবান্নে ডেকে ছোট মাঝারি নেতাদের চমকাচ্ছেন। ধমকাচ্ছেন। তাতে আগুন কিন্তু নিবছে না। গনগনে রাগের আগুনে ফুটছে সিঙ্গুর প্রতিনিয়ত । প্রতারিত তারা – বলছেন প্রকাশ্যে ।
এবারের লোকসভা নির্বাচনে গুজরাটের টাটার কারখানায় কাজ করা বাঙালি তরুণ ছুটে এসেছিলেন সিঙ্গুরে শুধু ভোটটা দিতে। পরের দিন ফিরতি ট্রেনে ফিরে যাওয়ার আগে পড়শিদের বলে গিয়েছিলেন – আমার ভোট বৃথা যাবেনা। লিখে রাখিস। অনেক ব্যথা বুকে নিয়ে সিঙ্গুর থেকে গুজরাটে গিয়ে পড়ে আছি।
গুজরাটে আস্তানা বাধা এই তরুণের মত অনেক তরুণের স্বপ্ন শেষ করেছেন মমতা। রতন টাটা দুঃখ করে একদিন বলেছিলেন – কি হারালো বাংলা বূঝলনা। যেদিন মুম্বাই থেকে রতন টাটা প্রেস স্টেটমেন্ট করলেন – thank u miss Banerjee. We are withdrawing। তার তিন ঘণ্টার মধ্যে রতন টাটার ফোনে ঢুকেছিল গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর sms । তারপরটা ইতিহাস।
তথ্য বলছে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা খারচ করে কলকাতা কর্পোরেশন সিঙ্গুরে গিয়ে টাটার আস্ত একটা শেড উড়িয়েছিল । সারা কলকাতা জুড়ে কলকাতা পুরসভা ৬ হাজার, পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর রাজ্য জুড়ে ৩৫ হাজার hoarding দিয়ে সিঙ্গুরের বিজয় বার্তা বংলা জুড়ে ঘোষণা করেছিল । সে বছরই কলকাতায় ৬ হাজার পদের জন্য সরকারের group D পরীক্ষায় বসেছিল ২৪ লক্ষ আবেদনকারী ।
শুধু সিঙ্গুর থেকে TATA নয়, ২০১০ সালে রাজারহাত থেকে Infosys তাড়ানোর ইতিহাস কম কিছু ?? চাষের জমিতে SEZ করতে দেব না বলে ২০১০ সালে ব্যাপক আন্দোলন শুরু করেছিলেন মমতা। তার আগে বুদ্ধদেব INFOSYS কে রাজী করিয়ে ফেলেছিলেন – ৫০ একর জমি নেবে তারা । সংস্থাটি ৭৫ শতাংশ জমি অর্থাৎ ৩৭.৫ একর জমিতে আই টি শিল্প করবে। বাকি ২৫ শতাংশ অর্থাৎ ১২.৫ একর জমি ব্যবসায়িক কাজে লাগাবে। ধাপে ধাপে তারা দেড় হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ করবে । যাতে প্রায় বিভিন্ন পর্যায়ে দশ হাজার কর্মসংস্থান হবে। সব চূড়ান্ত হওয়ার পর মমতার SEZ বিরোধী তীব্র আন্দোলনে ফিরে গিয়েছিল INFOSYS।
২০১৮ তে সেই INFOSYS কে প্রায় হাতে পায় ধরে ফেরাচ্ছে সরকার । কীভাবে ? শুনুন। SEZ থেকে দ্বিগুণ সুবিধে দিয়ে। বুদ্ধদেব INFOSYS কে ৭৫ শতাংশ জমি অর্থাৎ ৩৭.৫ একর জমিতে আই টি শিল্প করাতে রাজী করিয়েছিলেন। তৃণমূল সরকার ৫০ একর জমিতে ৫১ শতাংশ অর্থাৎ ২৫.৫ একর জমিতে আই টি শিল্পর প্রস্তাবে রাজী হয়ে গেল। বুদ্ধদেব রাজী করিয়েছিলেন দেড় হাজার কোটির বিনিয়োগে । তৃণমূল সরকার ১০০ কোটির বিনিয়োগেই রাজী হতে বাধ্য হল। বুদ্ধদেব দশ হাজার কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি আদায় করেছিলেন। INFOSYS তৃণমূল সরকারকে জানিয়েছে ৬ বছরে ১০০০ জনের চাকরি হবে। INFOSYS বুদ্ধদেবকে কথা দিয়েছিল রপ্তানির ব্যবসা করবে। এখন শুধুই support service এর ব্যবসা হবে এখান থেকে ।
ফল – সেদিন infosys থাকলে বাংলায় এতদিনে দশ হাজার শিক্ষিত তরুণের চাকরি হত। যা হল না ।
কি বুঝলেন ??
সিঙ্গুর ফুঁসবেনা কেন আজ ? এই প্রতারণা তো তাঁদের সঙ্গেও করা হয়েছে ? মানুষের জীবিকার বিনিময়ে তিনি মসনদ পেয়েছেন। হাজার হাজার ছেলে মেয়ের জীবন জীবিকাকে বন্ধক রেখে তিনি নবান্নের ১৪ তলার lift ধরেছেন । একটা সিঙ্গুর, একটা Infosys কেড়ে কেড়ে নিয়ে গেছে বহু জীবনের স্বপ্নগুলোকে । তাঁর ব্যক্তিগত ইচ্ছেপুরনের, স্বপ্ন পূরণের হাওয়াই জাহাজে ওঠার তাড়নায় ।
আজ বিদায়কালে স্বীকারোক্তি করছেন ? সিঙ্গুরের জমিতে আর চাষ হবেনা, করতে চাইছে না চাষিরা ।
বিধান সভায় শেষ কবে এমন সত্য বলেছেন মনে পড়ে আপনার ?
যদি সামান্য লজ্জাবোধ থাকে চলে যাওয়ার আগে এই সীমাহীন অপরাধের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে যান বাংলার কয়েক কোটি মানুষের কাছে । ক্ষমা তাঁরা করবেন না কারণ ক্ষমা হয়না এই সীমাহীন অপরাধের ।
তবু, তবুও ক্ষমা চান । নতজানু হয়ে । অন্তত একবার ।
২০২১ এ আপনার চলে যাওয়ার পর সেটাই একমাত্র সান্ত্বনা হয়ে থাকবে প্রতারিত বাঙালির ভাঁড়ারে ।
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় ( ৯৮৩০৪২৬০৭৮)