করোনা – আমপান বিপর্যয়ে বিধ্বস্ত পশ্চিমবঙ্গ |
প্রধানমন্ত্রী আমপান পরবর্তী পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখে গেলেও এক পয়সাও এখনও পর্যন্ত পায়নি
বঙ্গ |এদিকে এই রাজ্যে প্রতিদিন বেড়ে চলেছে করোনা – আক্রান্তের সংখ্যা |
আর তার মধ্যেই বিধানসভা ভোটের বাজনা বাজাতে একটুও লজ্জিত বোধ করেননি বিজেপির নাম্বার টু
অমিত শাহ |
সেই শাহবাবু যে মুকুল রায়কে ডেকে এই রাজ্যের আগামী বিধানসভা ভোট নিয়েই আলোচনা করবেন, তা বুঝতে বিশেষ
রাজনৈতিক জ্ঞানের প্রয়োজন হয় না |
বরং, ভোট ছাড়াও অন্য কোন কোন বিষয় নিয়ে
আলোচনা হয়েছে, তা অনুমান করতে গেলে বিজেপি নামক দলটির লক্ষ্য – মোক্ষ সম্পর্কে
পরিষ্কার ধারণা দরকার হয় |
মুকুলবাবুর মতো বিজেপি নেতারা অবশ্য বিজেপি সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গের ভোটারদের মনে নানান ধোয়াঁশা তৈরি করতে চান | আর এই জন্যই
অমিত শাহর সঙ্গে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীমন্ডলীতে জায়গা পেতে চলেছেন কিনা, এইসব প্রশ্নের উত্তরে মুকুলবাবু বলেছেন — আগামী বিধানসভা ভোট নিয়ে ভীষণ সিরিয়াস অমিত শাহ | এই নিয়েই আলোচনা হয়েছে, আর বিজেপিতে এ ভাবে মন্ত্রিত্ব পাওয়া যায় না, এ সব ফালতু ব্যাপার |
অর্থাৎ মুকুলবাবু বোঝাতে চাইলেন, বিজেপি বিরাট আদর্শবাদী শৃঙ্খলাপরায়ন দল |
এই দলে আড়াই বছর থেকে লোকসভা ভোটে দলকে এই রাজ্যে 18টি আসন পাইয়ে দিলেও রাজ্যে বা কেন্দ্রে গুরুত্বপূর্ণ পদ বা কেন্দ্রে মন্ত্রিত্ব পাওয়া
যায় না |
কেউ কেউ বলছেন, ও সব আরএসএস বা শৃঙ্খলা
ঘটিত ব্যাপার নয়, আসল কথা হল মুকুলের বিরুদ্ধে সিবিআই মামলা চলছে বলেই ওঁকে কিছু দেওয়া হচ্ছে না |
আবার কেউ বলছেন, এ রাজ্যের বিজেপির নিচুতলা থেকে আপত্তি উঠতে পারে বলেই মুকুলকে কিছু দেওয়া হচ্ছে না |
আর মুকুল বলছেন — এ সব ফালতু ব্যাপার, বিজেপিতে এ ভাবে হয় না |
কী ভাবে হয় তা হলে দেখে নেওয়া যাক |
গায়ক বাবুল প্রথম বার ভোটে জিতেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়ে যান |
দেবশ্রী চৌধুরী প্রথম বার ভোটে জিতেই মন্ত্রিত্ব পেয়ে যান |
ভোটের সময় ছাড়া আলুওয়ালিয়া সাহেবকে এ রাজ্যে দেখা যায় না |
তাঁকে মন্ত্রী করা হয় | মন্ত্রিত্ব গেলেও তাঁকে দলের সর্বভারতীয় সহ সভাপতির পদ দেওয়া হয় |
ইতিহাসের অধ্যাপককে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্ণর পদে বসিয়ে দেওয়া হয় |
একজন আইনজীবীকে দীর্ঘদিন ধরে দেশের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয় |
পড়াশোনায় লবডঙ্কা এক মহিলাকে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রীর চেয়ারে বসানো হয় |
মধ্য প্রদেশে সূর্য ওঠার আগে কাক – পক্ষী টের পাওয়ার আগেই বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী শপথ নেন |
চিটফান্ড নিয়ে হাজারো অভিযোগ থাকা সত্বেও কংগ্রেস থেকে সদ্য সদ্য বিজেপিতে আসা হিমন্তবিশ্ব বর্মাকে অসম মন্ত্রীসভায় চার – পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ দফতর
দেওয়া হয় |
নির্বাচনের কয়েক দিন আগে বিজেপিতে এসেই অর্জুন সিং লোকসভা নির্বাচনের টিকিট পেয়ে যান এবং এক বছর কাটতে না কাটতেই পশ্চিমবঙ্গে দলের সহ সভাপতি পদ পেয়ে যান |
এক কথায় তাই বলা যায়, আদর্শ বা শৃঙ্খলা নয়, ক্ষমতা করায়ত্ত করতে বিজেপি দলটি যে কোন
কাজ করতে লজ্জা পায় না |
কেউ কেউ তাই বলছেন, জম্মু – কাশ্মীরে 370 ধারা রদ, অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ, তিন তালাকের পর বিজেপির টার্গেট পশ্চিমবঙ্গ |
পশ্চিমবঙ্গের দিকে তাকিয়েই এনআরসি আনা হয়েছে |
নবজাগরণ, স্বাধীনতা আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু এবং বিজেপির আইডল শ্যামাপ্রসাদের পশ্চিমবঙ্গকে দখল করতে না -পারলে হিন্দু – হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের
ভিত্তি শক্ত হচ্ছে না |
অতএব আমপান – করোনা চুলোয় যাক, আগে নির্বাচনে জিততে হবে |
আর পশ্চিমবঙ্গে জিততে গেলে চাই মুকুল রায়কে |
মুকুল হাই সুগার নিয়ে রাজ্য চষে বেড়াবেন |
আর বিজেপির টিআরপি বাড়বে |
এই রাজ্য দখলে বিজেপির ” দ্বিতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনে ” মুকুল ঘুরবেন খালি হাতে |
তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে একটার পর একটা অভিযোগ দায়ের হবে |
হাজারো কাজের মধ্যেও নিয়ম করে আদালতে হাজিরা দিতে হবে |
মুকুল মাঝে মাঝে বলবেন — আমি ক্ষমতা চাই
না | আমার লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গের রাজপাট থেকে তৃণমূলকে টেনে নামানো |
ধরা যাক, মুকুলবাবু সফল হলেন |বিজেপি নির্বাচনে জিতে এই রাজ্যে ক্ষমতা দখল করল |মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসলেন শ্যামাপ্রসাদকে নিয়ে গবেষণায় রত নিপাট ভদ্রলোক ড.অরিন্দম গাঙ্গুলী |
তারপর কী হবে?
তারপরে কী মুকুলবাবুকে কেন্দ্রে মন্ত্রিত্ব দেওয়া হবে?
রাজ্যসভার সাংসদ করা হবে?
দলে তিনি গুরুত্বপূর্ণ পদ পাবেন?
তাঁকে কি পশ্চিমবঙ্গের ডেপুটি সিএম করা হবে? দেওয়া হবে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর?
দিলীপ ঘোষরা মানবেন?
নাকি করোনা – আক্ৰান্ত জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া সুস্থ হয়ে উঠলেই রথের পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা সম্প্রসারিত করা হবে?
দিল্লির ক্ষমতার অলিন্দে থাকা ব্যক্তিরা জানেন, কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে আসা মধ্য প্রদেশের জ্যোতিরাদিত্যকে খুব দ্রুত কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় জায়গা দিতেই হবে |
আর এই জন্যই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ যথা সময়ে করা হয়নি |
এই সম্প্রসারণ এই মাসে বা সামনের মাসের গোড়ায় করতেই হবে |
আর মন্ত্রিসভার এই রদবদলে মুকুলবাবু জায়গা না পেলে আগামী এক বছর তাঁকে অপেক্ষা
করতে হবে |
আর হাই সুগার নিয়ে ঢাল তলোয়ার ছাড়াই নিধিরাম সর্দার ( পড়ুন বিধানসভা নির্বাচন কমিটির
চেয়ারম্যান ) হয়ে রাজ্যের এ প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে ছুটতে হবে |
শুধুই তৃণমূলকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য
তিনি ” দ্বিতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে ” লড়ে যাবেন !
আস্তে কন কত্তা, ঘোড়ায় হাসব !