” হার্নেট ইংলিশের কালি নিয়ো না মুছে “, কাঁচরাপাড়া তৃণমূলের নতুন পালা

236

কাঁচরাপাড়া তৃণমূল প্রযোজিত ” হার্নেট ইংলিশের কালি নিয়ো না মুছে ” যাত্রাপালা বক্স অফিসের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে । টানটান মেলোড্রামা,নায়িকা,ভিলেন,খলনায়িকা ও বিবেকের ডায়লগ এবং অভিনয় দেখে দর্শকেরা বারবার হাততালি দিয়েছেন । কালির নীরব অভিনয়ে দর্শকেরা অভিভূত হয়েছেন ।
এই পালার কেন্দ্রে রয়েছেন কালি । তাকে কেন্দ্র করেই গল্প এগিয়েছে । নারীপ্রধান এই পালায় নায়িকা তিনিই । ভিলেন দু ‘জন— আলো ও রাণী । বিবেকের চরিত্রে রয়েছেন চিরপরিচিত খুকু । সহনায়িকা প্রেমা । খলনাযিকা শ্যামা । গুরুত্বপূর্ণ পার্শ্বচরিত্রে রয়েছেন পল্লবী ও মালা । এই পালার নির্দেশক সূর্য ও অর্জুন ।
এই পালার ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে । ভট্টাচার্য সাম্রাজ্যের পতনের পরে এই পশ্চিম বাংলায় ক্ষমতায় আসে
বন্দ্যোপাধ্যায় বংশ । তারপরেই হার্নেট ইংলিশের মঞ্চ দখল হয়ে যায় । ডিরেক্টর সূর্য মঞ্চে শিক্ষাকুলের কলঙ্ক পল্লবী এবং কামাইবাজ কালিকে মঞ্চে নামিয়ে দেন । প্রেমা
( যাকে সূর্য ‘সি- চাণক্য ‘ বলে প্রশংসা করেছিলেন ) আগেই মঞ্চে ছিলেন । তিনি পল্লবী ও কালিকে বলেন সেই বিখ্যাত ডায়লগ—-চুরি বিদ্যা বড়ো বিদ্যা,যদি না পড়ো ধরা । আর ডিরেক্টর সূর্য বলে দেন– এই মঞ্চের পাল্টা মঞ্চ চাই । মাল ইধার উধার করে পাল্টা মঞ্চ বানাতে হবে । সেই মঞ্চের জ্ন্য মাল যোগাড় করতে হবে । এই মঞ্চের লাভের গুড় সরিয়ে নতুন মঞ্চের জ্ন্য জমি কিনতে হবে ।
ত্রিমূর্তি ডিরেক্টরের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে । অন্য দিকে মঞ্চে নতুন নতুন অভিনেতা ঢুকিয়ে , রূপসাকে বরাত দিয়ে নতুন নতুন বিল্ডিং তুলে আর হিসেবে কারচুপি করে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাত করে । তিন জনের এই মধুচন্দ্রিমা চলে পাঁচ-ছ বছর । কাহিনিতে টুইস্ট আনার জন্য ৩ বছর আগে প্রেমাকে মঞ্চ ছাড়তে হয় । ডিরেক্টরও বদলে যায় । চার
অভিনেত্রী চুরি ধরে ফেলায় প্রেমা- পল্লবী- কালি তাদের মঞ্চ থেকে বহিষ্কার করেছিল । সেই চার জন নতুন ডিরেক্টরের আমলে বিচারের জ্ন্য আবেদন করেও বিচার পায়নি । তারা তাই যাত্রাপালা চলার সময় চিৎকার করতে শুরু করে । নতুন
ডিরেক্টর হয়ে আসে অর্জুন । নতুন ডিরেক্টর- এর নির্দেশ ছিল—– অভিনয় যেন অভিনয়ের মতো হয় ।
প্রেমার চেয়ারে বসে শ্যামা । মঞ্চে প্রবেশ করে আলো ও রাণু । কালি আলো ও শ্যামাকে সঙ্গে নিয়ে শিক্ষানুরাগীর ভূমিকায় তুখোড় অভিনয় চালিয়ে যায় । ইংরেজি মঞ্চ হলেও বাংলায় গার্ডিয়ান্স মিটিং করে । রূপসার জায়গায় আসে মালা । আর কালি চেক সই করে প্রেমার নামে থাকা ব্যাংক একাউন্ট থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলতে থাকে । আর কিনে ফেলে বিরাট ফ্ল্যাট । ফিঁয়াসেকে কিনে দেয় দামি দামি গয়না । শ্যামা ও রাণুকেও টাকার ভাগ দেয় । কিন্ত,রাণু বলে সেই বিখ্যাত ডায়লগ— তোমার পাপের টাকা নিচ্ছি,কিন্তু তোমার পাপের ভাগ কিন্তু নেব না ।
শ্যামা মোনালিসার মতো হেসে তার বডিগার্ড কাম সঙ্গিনীকে বলে–মস্করা করছে মাইরি! সতী!
আলো শুধু বলে— আমি স্কুলের টিচার ছিলাম । আমি শিক্ষা নিয়ে এই নোংরামি দেখতে পারছি না । আমাকে মিস্টির প্যাকেটে টাকা দেবে । প্যাকেট আমার সাইডব্যাগে আছে । ভরে দাও ।
তিন বছর ধরে এই চারমূর্তি নতুন নতুন সখা- সখীকে ইংলিশের মঞ্চে নিয়ে আসে ।
কালি আনে পরিচিত- অপরিচিত চার-পাঁচ জনকে । আলো নিজের মেয়ে ও ভাইজিকে নিয়ে আসে । শ্যামা স্কুলের বান্ডিল বান্ডিল টাকা নিয়ে জাগলারি করতে থাকে । বডিগার্ডের সংখ্যা বাড়ায় । রাণু নিউ কলোনির এক ঐতিহাসিক,ইটখোলার এক ইনজিরিদি- সহ চার জনকে মঞ্চে নিয়ে আসে । রাণু মঞ্চ ছাড়ে । তার জায়গা নেয় খুকু ।
পালা ভালই চলছিল । কারণ দর্শকেরা ঘুমিয়ে পড়েছিল । শ্যামার চেঁচামেচিতে তাদের ঘুম ভেঙে যায় । শ্যামা কালি ও আলোকে চোর – জালিয়াত বলে গালাগাল দেয় আর সব জায়গায় চিঠি লিখে বলে– খুকুর ভাই মালাকে বিল্ডিংয়ের বরাত দিয়ে স্কুলের টাকা গাপ করতে চাইছে কালি- আলো ।
বিপদ দেখে মঞ্চ ছেড়ে পালায় আলো ।
আলো বলে— চুরি করছে । শিক্ষক হয়ে দেখতে পারছিলাম না । তাই পালিয়ে এলাম ।
আর রাণু হঠাত মঞ্চে উঠে চিৎকার বলে– কালিই নাটের গুরু । আমি সতী । আমি কিছু দেখিনি,কিছু শুনিনি,আমি কিছু খাইনি,আমি শুধু রত্ন নিয়ে কারবার করেছি । খুকু ডিরেক্টরের নাম বদনাম করেছে । এরা পাকা অভিনেত্রী হতে পারেনি ।
খুকু ক্ষেপে গিয়ে ভরা মঞ্চে সং- দের ডেকে বলে— আমি সতী,একশো ভাগ সতী । সব নষ্ট- এর গোড়া শ্যামা । কালির মতো মূর্খ কামাইবাজের জন্যই এই স্কুলের বারোটা তাড়াতাড়ি বেজেছে । এই স্কুল কামাই আর অভিনয়ের স্কুল হয়ে উঠতে পেরেছে । অতএব– হার্নেট ইংলিশের কালি নিয়ো না মুছে ।
বরং,আমরা শ্যামাকে মুছে দিয়ে নতুন পুতুল নিয়ে আসব । নতুন করে মঞ্চ তৈরি করা হবে ।
সেই মঞ্চ তৈরির কাজ চলছে । নতুন মঞ্চে অভিনীত হবে নতুন যাত্রাপালা ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

19 + sixteen =