87

মমতা ব্যানার্জী বিরোধী পক্ষে থাকাকালীন একটা কথা জোরালো ভাবে সারা ভারতের মানুষের কাছে রাখতে পেরেছিলেন , আর তা হলো ৩৪ বছরের বাম -আমলে বিরোধী রাজনৈতিক দল তো বটেই, সাধারণ মানুষের কাছেও পশ্চিমবঙ্গ একটা বধ্যভূমিতে রূপান্তরিত হয়েছে। তাই তাঁর আবেদন ছিল, এই অত্যাচার থেকে মানুষকে উদ্ধার করা এবং মানুষকে সুশাসন দেওয়ার জন্য মা, মাটি, মানুষের সরকার তৈরী করার সুযোগ দিন।

২০১১-তে মানুষ সেই সুযোগ দিল । দু’হাত ভরে ভোট দিল আর তাঁকে যেন বলল — রাজনৈতিক হানাহানি, দুষ্কৃতী – দৌরাত্ম্য বাংলা থেকে যেন চলে যায়।

কিন্তু, ২০১৯-এ এসে কি দেখা গেল?
পশ্চিমবাংলার বারাকপুর লোকসভা অঞ্চলের অন্তর্গত ভাটপাড়া বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে। দিনের পর দিন এই এলাকা দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চল হয়ে উঠছে । দুষ্কৃতী-দৌরাত্ম্য এতটাই বেড়েছে যে দিনের বেলা শুট আউট এর মতো ঘটনা রোজকার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
“ল এন্ড অর্ডার” বিপর্যস্ত |
বারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট প্রায় ব্যর্থ |
মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারা পুরস্কারপ্রাপ্ত অফিসার এই কমিশনারেটে রয়েছেন । আর তিনি হলেন, ২০১৯-এ ABP আনন্দের সাংবাদিকের গায়ে হাত তুলে কিছুটা বদনাম কামানো IPS অফিসার অজয় কুমার ঠাকুর | তিনি থাকা সত্বেও এই অঞ্চলটা এ’রকম যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে কি ভাবে, সেটা অনেকের কাছেই বোধগম্য হচ্ছে না।
IPS অফিসারদের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন থাকার কথা নয়। কিন্তু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা যে এঁদের কাজে লাগানোর সুযোগ খোঁজেন, তা ভারতবর্ষের সামগ্রিক সিস্টেম দেখলে বোঝা যাবে।
IPS অজয় ঠাকুরকে যে রকম “এগ্রেসিভ ” দেখা গিয়েছিল মিডিয়া কর্মীদের সামলাতে,তাঁকে তেমন “এগ্রেসিভ “দেখা যাচ্ছে না ভাটপাড়ায় দুষ্কৃতী তান্ডব বন্ধ করতে । IPS-এর কর্মদক্ষতা কে কাজে লাগিয়ে অনায়াসে ভাটপাড়ার মতো ছোট অঞ্চলকে দুষ্কৃতী-মুক্ত করতে পারবেন অজয় ঠাকুর, এই আশা বাংলাবাসী করতেই পারেন ।

তাহলে কি শাসক ও বিরোধী দলের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন আছে। যে এলাকা নিয়ে কথা হচ্ছে, সেই এলাকা নিয়ে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রীকে বাড়তি উদ্যোগ নিতে দেখা গেছে। মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়বাবুকে বারে বারে ভাটপাড়াকে কেন্দ্র করে নৈহাটি, কাঁচড়াপাড়াতে ছুটে আসতে , মিটিং করতে দেখা গিয়েছে |
কিন্তু তা সত্ত্বেও কেন ভাটপাড়া দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চল হয়ে রয়ে গেল?
তাহলে কি বিরোধীপক্ষে থাকাকালীন মমতা ব্যানার্জীর কথা ” শাসক দলের রাজনেতিক সদিচ্ছা” , সেই জায়গাটা কি ফের এই তৃণমূল জমানায় তৈরী হচ্ছে ? মন্ত্রীর আসাতেও যদি সমস্যার সমাধান না হয়, তাহলে ভাটপাড়ার মানুষ কার ওপর ভরসা করবেন ?
ভাটপাড়ার মানুষ খুব কষ্টে আছেন ।
একটু ভাবুন। প্রশাসন ভগবান জগন্নাথদেবের ভূমিকা পালনে ব্যস্ত |মন্ত্রী, বিরোধীদল রাজনীতি করতে ব্যস্ত ।
তবে আশা থাকবে ভাটপাড়াবাসীর কথা মাথায় রেখে ব্যারাকপুর কমিশনারেট ও সামগ্রিক প্রশাসন এই বধ্যভূমিকে শিশুদের বাসযোগ্য করে তুলতে পারবেন ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

20 − five =