তৃণমূল নেতা – নেত্রীরা কোথায়? মেয়েদের কোয়রাণ্টিন কেন্দ্র না – থাকায় কাঁচরাপাড়া, কাঁপা, হালিশহরের পাড়ায় পাড়ায় করোনা – সংক্ৰমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে

84

রাত দশটা | কাঁচরাপাড়া পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের ইয়ুথ ক্লাব সংলগ্ন বনগাঁ রোডের ধারে বন্ধ একটি দোকানের সামনে মাটিতে বসে মোবাইল ঘাঁটছে এক বাইশ বছর বয়সী কন্যা |
রাস্তার উল্টোদিকে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে এক মানুষ ভিড় |
মেয়েটি যেখানে বসে আছে, তার পাশ দিয়েই গেছে তার বাড়িতে ঢোকার রাস্তা |
সেই রাস্তার মুখেও ভিড় | আতঙ্কিত ভিড়ের মানুষেরা পুলিশের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে |
সুদূর মহারাষ্ট্র থেকে ভিড়ে গাদাগাদি শ্রমিক ট্রেনে 36 ঘন্টা কাটিয়ে মেয়েটি এদিন বিকেলে নেমেছে হাওড়া স্টেশনে |
সেখানে তাকে আটকায়নি কোন সরকারি লোক | বিনা বাধায় কোন করোনা – পরীক্ষা ছাড়াই মেয়েটি দাদার সঙ্গে ভাড়া ট্যাক্সিতে উঠে কাঁচরাপাড়ায় নিজের বাড়ির সামনে পৌঁছে গেছে |
মেয়েটির হাতে কোন প্রমাণ নেই, প্রমাণ নেই যে সে করোনা – সংক্ৰমণ মুক্ত |
ফলত, 36 এবং আরও 2 ঘন্টার কষ্টকর যাত্রার শেষে সে বাড়ি ঢুকতে পারছে না |
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী কালই নবান্নে বসে ” শ্রমিক এক্সপ্রেসের নামে আপনারা কি করোনা এক্সপ্রেস করতে চান? ”
মুখ্যমন্ত্রী কি নবান্নে বসে এই মন্তব্য করতে পারেন?
আর এমনটা মনে করছেন বলেই কি শ্রমিক ট্রেনে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের কোন রকম পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না?
আর শুধুমাত্র এই জন্যই 36 – 40 ঘন্টার অবর্ণনীয় ট্রেনযাত্রার শেষে করোনা সংক্ৰমণ মুক্ত পরিযায়ী শ্রমিকেরা ঘরে ঢুকতে পারছেন না | হাওড়া স্টেশনে নামার পরে এই শ্রমিকদের পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হলে সেখান থেকেই তো আক্রান্তদের কোভিড হাসপাতালে পাঠানো যেত |
বাকিদের ঘরেই আইসোলেশনের নিদান দেওয়া হলে একদিকে যেমন রাজ্য জুড়ে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা কমত, তেমনই কাঁচরাপাড়ার এক নম্বর ওয়ার্ডের মেয়েটির মতো ঘরে – ফেরা শ্রমিকদের পাড়ার মানুষের বাধার মুখোমুখি হতে হত না | সরকারি কাগজ দেখিয়েই সে তার পরিবারকে নিয়ে চলে যেতে পারত হোম কোয়রাণ্টিনে |
কিন্ত, রাজ্য প্রশাসন এই সব না – ভেবে রাজ্যের মানুষের হাতেই ঘরে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের ছেড়ে দিয়েছেন |
আর তাই কিছু দিনের মধ্যেই অবস্থা হাতের বাইরে চলে যেতে পারে | কারণ সংক্রমণের আশঙ্কায় মানুষ যে কোন সময় নিজের হাতে আইন তুলে নিতে
পারেন |
মানুষের ক্ষোভের পারদ তাই চড়তে শুরু করেছে |
ক্ষোভের পারদ চড়ছে কারণ অন্য রাজ্য থেকে ফেরা মেয়েদের জন্য কোন কোয়রাণ্টিন কেন্দ্রই নেই কাঁপা, হালিশহর, কল্যাণী কিংবা কাঁচরাপাড়ায় |
এই জন্য গতকাল রাতে কাঁচরাপাড়ার এক নম্বর ওয়ার্ডের মহারাষ্ট্র ফেরত মেয়েটিকে ঘরে ঢুকিয়ে ” কাল পরীক্ষা করিয়ে নেবেন ” বলেই দায়িত্ব সেরেছে
পুলিশ |
আর মানুষের ক্ষোভ বেড়েছে | ক্ষোভ বেড়েছে শাসক দল তৃণমূলের নেতা – নেত্রীদের বিরুদ্ধে |
কারণ, এই ” বিপদে ” কোন নেতা – নেত্রী তাঁদের পাশে এসে দাঁড়াননি |