১৯৭৪ সালে রেলের জমিতে প্রতিষ্ঠিত কাঁচরাপাড়া ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল এখন যেন শরৎ চাটুজ্জের ‘ চরিত্রহীন’ উপন্যাসের উর্বর পটভূমি তৈরি করেছে | শরৎবাবুর বহুচর্চিত এই উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্রের মধ্যেই হীনতার উপাদান রয়েছে | আর তাই এই উপন্যাস পড়তে পড়তে পাঠক বিভ্রান্ত হয়ে খেই হারিয়ে ভাবতে থাকেন — কে চরিত্রহীন ? তারপর এই সিদ্ধান্তে পৌঁছে যান—কেউ ধোয়া তুলসীপাতা নন , ক্ষমতার অলিন্দে থাকা সব চরিত্রই চরিত্রহীন |
হার্নেট ইংলিশ মিডিয়ামের চলমান ঘটনাপ্রবাহও যেন কাঁচরাপাড়ার সচেতন নাগরিকদের মনে চরিত্রহীনের মতোই ধন্দ তৈরি করেছে | এই ওয়েবসাইটে এই স্কুল নিয়ে খবর প্রকাশিত হওয়ার পরে ৯ সেপ্টেম্বর শহরের ” প্রতিষ্ঠিত কামাইবাজ'( কোট – আনকোট: তৃণমূল নেতা রঞ্জিত চৌধুরী উবাচ ) সুনীল ( কালিবাবু ) রায়কে পাশে বসিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে নিজেকে ধোয়া তুলসীপাতা বলে দাবি করেছেন স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি খোকন তালুকদার | আমরা জোরের সঙ্গে বলতে চাই ( টাকার লোভ প্রত্যাখ্যান করার পরে মানহানির মামলা করার হুমকি দেওয়ার পরেও, ) , খোকনবাবু এই ভাবে প্রেস কনফারেন্স ( মুখোমুখিকে অবশ্য ডাকা হয়নি ) করে কালিবাবুকে প্রশ্রয় দিলেন | আর কে না জানে — অন্যায় যে করে, অন্যায় যে সহে মানে কালিবাবুর মতো ” প্রতিষ্ঠিত অন্যায়কারীকে” পাশে বসিয়ে প্রশ্রয় দিয়ে অন্যায়ের পাশেই দাঁড়িয়েছেন স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি খোকন ওরফে অশোক তালুকদার | কেন তিনি কালিবাবুকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন? দিচ্ছেন, কী জন্য? কি আড়াল করার জন্য ? তাহলে চোর কে ? চোর কারা ? আগের প্রিন্সিপ্যাল মারা গেলেও তাঁর একাউন্ট থেকে সুনীল ওরফে কালিবাবু টাকা তুলছিলেন কেন? ( এই অভিযোগ শুধুই রঞ্জিত চৌধুরী তোলেননি, স্কুলের ম্যাডামরাও কালিবাবুর এই কীর্তির কথা জানেন | ) এতো বড়ো অপরাধ করার পরেও স্কুলের তরফে খোকনবাবুরা কালিবাবুর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ সংশ্লিষ্ট মহলে এখনও জানাননি, এমনকি স্কুল পরিচালন সমিতি থেকেও কালিবাবুকে বের করে দেননি, কেন ? কেন তাকে পাশে বসিয়ে তাকে আড়াল চেষ্টা করছেন? আগের কমিটিতেও কালিবাবু ছিলেন, সেই কমিটি অপ্রয়োজনীয় বিলডিং তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল |
আর এই স্কুলের ১০ বছরের প্রিন্সিপ্যাল শ্যামলকুমার ব্যানার্জিকে বলির পাঁঠা করছেন ? শ্যামলবাবু ৪ সেপ্টেম্বর ইস্তফা দিয়েছেন | তাঁর বিরুদ্ধে টাকা নয়ছয় করা এবং নানান অভিযোগ তোলা হয়েছে | বিভিন্ন মহলে শ্যামলবাবুর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে |
অন্য দিকে শিক্ষক দিবসের আগে স্কুলের সহ- সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন অলোকময় লাহিড়ি | তিনিও প্রকাশ্যে নয়, তবে ঘনিষ্ঠ মহলে বলছেন — শিক্ষক হয়ে শিক্ষাঙ্গনে চুরি- নোংরামি সহ্য হচ্ছিল না, তাই সরে এলাম | কিন্তু, অভিযোগ, কালিবাবুর সহযোগী হয়ে এক সময় অনেক অন্যায়ে মদত দিয়েছেন | শুধু তাই নয়, নিজের মেয়ে অমৃতা লাহিড়ি এবং ভাইজিকে এই স্কুলে ঢুকিয়ে দিয়েছেন |
রঞ্জিতবাবুর বিরুদ্ধেও এই স্কুলে নিজের লোক ঢোকাবার অভিযোগ রয়েছে | প্রশ্ন, কালিবাবু অন্যায় করলেও স্কুলের প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন রঞ্জিতবাবু কেন কালিবাবুর বিরুদ্ধে তখন কেন কোন অভিযোগ করেননি ?
স্কুলের দায়িত্বে এক সময় ছিলেন এক মাস্টারমশাই | তাঁর বিরুদ্ধেও নানান অভিযোগ রয়েছে | সিপিএম আমলে রীতা ভট্টাচার্য যখন প্রিন্সিপ্যাল ছিলেন, তখন সিপিএম পরিচালিত পরিচালন সমিতির বিরুদ্ধেও স্কুলের টাকা নয়ছয় করার এমন অভিযোগ উঠেছিল যে রীতাদেবীকে সরে যেতে হয় |
তাই বলা যায়, এই স্কুলের সঙ্গে ” চরিত্রহীন ” উপন্যাসের মিল রয়েছে | চরিত্রহীন উপন্যাসের চরিত্রহীনকে চিহ্নিত করতে গিয়ে হাকুপাকু খেতে খেতে পাঠক বোঝেন, সবাই চরিত্রহীন | আর হার্নেট ইংলিশে চুরি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অযোগ্য লোকেদের পরিচালক হয়ে ওঠার রিপোর্ট লিখতে গিয়ে রিপোর্টার বুঝতে পারেন — এই স্কুলের পরিচালন সমিতিতে রাজনৈতিক পরিচয়ের জোরে যারা ঢুকে পড়েন, তারা সবাই ……. |