স্কুল – অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্র থেকে সতেরো মাস নিখোঁজ ডিম, চরম অপুষ্টিতে ভুগছে এক কোটির উপরে শিশু

64

পশ্চিমবঙ্গ ক্ষেতমজুর সমিতি স্কুল ও অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্র গুলিতে ডিম চালুর দাবিতে হাই কোর্টে গিয়েছে ।
কারণ গত ১৭ মাস ধরে অঙ্গনওয়াড়ী এবং ৬- ১৪ বছরের স্কুলপড়ুয়ারা ডিম থেকে বঞ্চিত ।
সব মিলিয়ে মা- শিশুর বরাদ্দ থেকে সরে গেছে প্রায় ১১০০ কোটি টাকা । সেই টাকা কোন জরুরী কাজে লাগিয়েছে রাজ্য সরকার ?
কেউ কেউ অবশ্য কটাক্ষ করে বলছেন— কেন, দুর্গাপুজো করার জন্যে ক্লাব গুলিকে রাজ্য সরকার ১৮০
কোটি টাকা দিচ্ছে না ?
ঠাট্টা-কটাক্ষ থাক, আসল কথাটা হল– গত ১৭ মাস ধরে অঙ্গনওয়াড়ীতে ছোলা আর সয়াবিন বিলি হয়েছে ,যে গুলি
প্রোটিন জোগানোর ভান মাত্র । ডিম থেকে শিশুর শরীর যত প্রোটিন গ্রহণ করতে পারে,সয়াবিন বা ছোলা থেকে পারে তার সামান্যই ।
শিশুদের উপরে এই বঞ্চনার দায় কিন্তু রাজ্য সরকার কেন্দ্রের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে পারবে না ।
কারণ কেন্দ্রীয় সরকারের মানব সম্পদ উন্নয়ন দফতর লকডাউনের শুরুতে ( ২০ মার্চ, ২০২০) নির্দেশ পাঠিয়েছিল ,
স্কুল বন্ধ থাকলেও রান্না- করা খাবার দিতে হবে,নইলে সমস্ত উপকরণ এবং রন্ধনকর্মীর খরচ ” খাদ্য নিরাপত্তা ভাতা ” হিসাবে দিতে হবে শিশুদের ।
রাজ্য সরকার কী করল ?
গত ১৭ মাস ধরে ডিম দেওয়াই বন্ধ করে দিল!

অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রের শিশুদের প্রতি দিন খিঁচুড়ি,অন্তত আধখানা ডিম,সব্জি-সয়াবিন,ছাতু- গুড়ের লাড্ডু পাওয়ার কথা,তাদের জন্য এই অতিমারি কালে রাজ্য সরকারের ” আইসিডিএস ডিরেক্টরেট ” বরাদ্দ করেছে গোটা মাসে দু ‘কেজি চাল, দু ‘কেজি আলু আর তিনশো গ্রাম মুসুর ডাল । পশ্চিমবঙ্গ খেতমজুর সমিতির হিসাব, লকডাউনের প্রথম ন ‘ মাসে অন্তত সাড়ে আঠেরো হাজার টন ডাল মার গিয়েছে শিশু ও মায়েদের বরাদ্দ থেকে ।
২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে টানা চার- পাঁচ মাস ওই যৎসামান্য ডালও বিলি হয়নি,কারণ খাদ্য বিতরণই বন্ধ করেছিল অঙ্গণওয়াড়ী প্রকল্প । আর শিশুরা ৫৯৪ কোটি টাকার খাবার হারিয়েছে ।
আর দিনে ১২ থেকে ১৮ গ্রাম প্রোটিন পেয়ে প্রায় এক কোটির উপরে শিশু চরম অপুষ্টিতে ভুগছে ।

খাদ্যের অধিকার মানে সুষম খাদ্যের অধিকার । তাই বাজার- ট্রেন বন্ধ করতে পারলেও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার বন্ধ করতে পারে না রাজ্য সরকার । সে অধিকার রাজ্যের নেই । তাই আদালতের নির্দেশে শিশুরা হয়তো ডিম ফিরে পাবে, কিন্তু আজকের মা,তার কম ওজনের সন্তান আর সেই কন্যাদের সন্তান— তিন প্রজন্ম ধরে এর দাম চোকাতে হবে ।

তবে নিজেদের ” পাপ ” ঢাকতে রাজ্য সরকার এখনই এই আপৎকালীন পরিস্থিতিতে চালু
করুক ” দুয়ারে ডিম ” প্রকল্প ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

five + sixteen =