উত্তর ২৪ পরগনা জেলার কাঁচরাপাড়া, কাঁপার অধিবাসী উজ্জ্বল নিয়োগী কর্মসূত্রে থাকেন সুইডেনে। সেখানকার ‘Korolinska Institute’ অধ্যাপক ও বিজ্ঞানী তিনি। করোনা নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা। ভ্যাকসিন আবিষ্কার করার প্রচেষ্টায় রয়েছেন তারা। ‘Korolinska Institute’ – এর ল্যাবে এই নিয়ে দিনরাত চলছে তাঁদের গবেষণা। সেখান থেকে তিনি বাংলায় লিখে জানাচ্ছেন —-
“করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে বিতর্ক থাকলেও মোটামুটি ভাবে একথা বলাই যায়, চিনের উহান প্রদেশের খোলা মাংসের বাজার থেকে এর উৎপত্তি। এখনও পর্যন্ত গবেষণা করে যা জানা গেছে, এই ভাইরাস এসেছে বাদুড় থেকে।
হয়ত মধ্যবর্তী পাঙ্গোলিনের অভিযোজনের মাধ্যমে। এখনও পর্যন্ত এই ভাইরাসের অস্তিত্ব ১৮৮টা দেশে পাওয়া গেছে। ৫৩ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত। দুর্ভাগ্যজনক বিষয়, এখনও পর্যন্ত সাড়ে তিন লক্ষ মানুষ এই ভাইরাসের প্রকোপে প্রাণ হারিয়েছেন।
এই ভাইরাস সাধারণত ৬০ বছর উর্ধ্বের ব্যক্তি এবং যাঁদের রক্তচাপ, হার্টের রোগ, ফুসফুসের রোগ বা ডায়োবেটিস আছে তাদের জন্য মারাত্মক। তাই তাঁদেরকে যদি রক্ষা করা যায়, করোনার বিরুদ্ধে অনেকটাই যুদ্ধে জিতে যাওয়া যাবে।
এই ভাইরাস নতুন | তাই এর সমন্ধে তথ্য অনেকটাই অজানা। ভ্যাকসিন আসতে সময় লাগবে ১ থেকে ২ বছর বা তারও বেশী।
তাই সুইডেনের ‘Korolinska Institute’ এর ল্যাবে আমাদের এখনকার গবেষণার প্রধান বিষয় — অন্যান্য রোগের জন্য যে সমস্ত ওষুধ বাজারে প্রচলিত আছে সেই ওষুধ গুলো করোনা রোগীর ক্ষেত্রে কাজ করে কিনা, তা দেখা |
এমনই একটা ওষুধ হল ‘Remdesivir’ | এই ওষুধটি ইবোলা ভাইরাসের জন্য তৈরী হয়েছিল। কিন্তু কাজ করেনি। আমাদের প্রাথমিক গবেষণায় একটা ধারণা পেয়েছিলাম যে এই ওষুধটি করোনাতে কাজ করতে পারে।
সম্প্রতি আমেরিকা ও বিভিন্ন দেশে এর প্রয়োগ শুরু হয়েছে। এর কার্যকারিতাও পাওয়া গেছে। এছাড়াও দক্ষিণ কোরিয়াতে করোনা – আক্রান্তদের তিনটি ওষুধ একসাথে দিয়ে ভালো ফল পাওয়া গেছে। এই গবেষণায় যে তিনটি ওষুধ দেওয়া হয়েছিল, সে গুলি হল,-
১. লোপিনাভির/রিটোনভির(Lopinavir/Riton avir)
২. রিবাভিরিন(Ribavirin)
৩.ইন্টারফেরন-বিটা(Interferon-beta)
যা কিনা HIV/AIDS, Hepatitis-C/Jaundice এবং Multiple Sctcrosis এর ওষুধ । এছাড়া জাপান ও ভারতের ফ্যাবিফিরাভির(Favipiravir), যা ইনফ্লুয়েঞ্জার ওষুধ, তার পরীক্ষালব্ধ প্রয়োগ শুরু হয়েছে।
এছাড়াও আমার ল্যাব এই ভাইরাসের চরিত্র বোঝার চেষ্টা করছে। ”
এই মুহুর্তে আমাদের কি কি করণীয়, তাও জানিয়েছেন কাঁপা – চাকলা পঞ্চায়েতের প্রধান রবীন্দ্রনাথ নিয়োগীর ভাইপো এবং বাঙালি বিজ্ঞানী উজ্জ্বল নিয়োগী ।
তিনি লিখেছেন — ” ভ্যাকসিন আসতে যেহেতু দেরী আছে, তাই ততদিন পর্যন্ত আমাদের এই ভাইরাসকে সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কিছু পরিবর্তন, কিছু সামাজিক কর্তব্য এবং সচেতনতা আমাদেরকে এর হাত থেকে বাঁচাতে পারে। ”
তিনি এও জানান, ” ‘লকডাউন’ কোন সমস্যার সমাধান নয়। সুইডেনে লকডাউন হয়নি। সুইডেনের সরকার তার নাগরিকদের সামাজিক কর্তব্য পালন করার কথা বারবার মনে করিয়েছে । সে
গুলি হল —
প্রথমত , বাড়ির বয়স্ক(৬০এর উপর) এবং যাঁদের Co-morbidity আছে তাদেরকে যথাসম্ভব বাড়ির বাইরে যেতে না-দেওয়া। সুইডেন বয়স্ক লোকদের বাঁচাতে পারিনি। তাই বয়স্ক লোকদের মৃত্যুর হার এখানে অনেক বেশী।
দ্বিতীয়ত, লকডাউন উঠে যাবার পর দীর্ঘ দিন পর্যন্ত সোশ্যাল ডিসট্যানসিং ও মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। ঘনঘন হাত ধুতে হবে। Disposible মাস্ক ব্যবহার না -করাই ভালো।
তৃতীয়ত , বাড়ির বাইরে বেরিয়ে নাক, মুখ ও চোখে হাত না দেবার চেষ্টা করতে হবে।
চতুর্থত , কারও সাথে কথা বলার সময় অন্তত চার হাত দূরে থাকা প্রয়োজন। জনাকীর্ণ স্থান পরিবর্তন করতে হবে।
পঞ্চমত , যদি কেউ অসুস্থ হয়ে থাকে মানে কাশি, জ্বর ও সর্দি হয় তাদের একদম বাড়ির বাইরে বেরনো চলবে না।
ষষ্ঠত, বাইরে থেকে বাড়িতে ফিরে হাত, পা, মুখ সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এই ছোট ছোট কিছু পরিবর্তন জীবনে আনলে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে জেতা সম্ভব হবে। “