দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা আসনে 26 বছরের প্রিয়রঞ্জন হারিয়ে দিয়েছিলেন বিপ্লবী গণেশ ঘোষকে

115

খুব সম্ভবত ১৯৭০ সালের আশেপাশে! বাংলায় তখন সিদ্ধার্থ জমানা! কলকাতায় তখন কংগ্রেসিদের রাজ চলছে! সেই সময়কার একজন সিপিএম নেতা ছিলেন বিখ্যাত এক বিপ্লবী, দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ (১৯৬৭-৭১), বেলগাছিয়া থেকে টানা তিনবারের বিধায়ক (১৯৫২,১৯৫৭,১৯৬২)!

সেই সময়কার কোনো একটা বছরে দক্ষিণ কলকাতারই এক বিখ্যাত দুর্গাপূজোর উদ্যোক্তারা হাজির হলেন সেই বাম নেতার কাছে! দাবী তাঁদের এবছরের পূজো উদ্বোধন ওনাকেই করতে হবে! কিন্তু উনি কট্টর বামপন্থী তাই পূজো উদ্বোধনে থাকার প্রশ্নই ওঠে না। সেকথা উনি উদ্যোক্তাদের জানিয়ে বললেন “দেখুন আমি তো কমিউনিস্ট, আমি পূজো উদ্বোধনে সাধারনত যাই না!” কিন্তু উদ্যোক্তারা নাছোড়বান্দা! অনেক অনুনয় বিনয় করে রাজী করালেন ওনাকে!

উদ্বোধনের দিন বামনেতা সঠিক সময়ে পূজো মন্ডপে হাজির! মন্ডপে ঢোকার আগে জুতো খুলে ভিতরে ঢুকলেন আর প্রতিমার সামনে গিয়ে দু’হাত জোড় করে দাঁড়ালেন!

এই দৃশ্য দেখে তো সবাই অবাক! নামকরা বামপন্থী নেতা নাকি খালি পায়ে ঠাকুরের সামনে দুহাত জোড় করে দাঁড়িয়ে আছে!

খানিকক্ষণ পর যখন ওই নেতা মন্ডপ থেকে বেরিয়ে আসছেন তখন একজন ওনাকে জিজ্ঞাসা করলেন “আপনি তো কমিউনিস্ট, তাও দুর্গা প্রতিমাকে হাত জোড় করে নমস্কার করলেন?” উনি অল্প হেসে জবাব দিলেন “দেখুন তিনজন সুন্দরী ভদ্রমহিলা তার পরিবার পরিজনদের সাথে বছরে একবার করে মাত্র আসেন, তাদের দেখে নমস্কার জানাব না? খামোখা অভদ্রতা করতে যাবই বা কেন?” চারিদিকে তখন হাসির রোল!

কিছু বছর পরের ঘটনা! সেই বামনেতার বয়স ওই ৭২ কি ৭৩ হবে! সদ্য ৭১’এর লোকসভা নির্বাচনে দক্ষিণ কলকাতা সিটে ২৬ বছরের প্রিয়রঞ্জনের কাছে হেরেছেন!

মানুদা, প্রিয়দা তখন কলকাতা জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে আর সাথে চলছে বামেদের ধোলাই দেওয়ার কাজ!

সেই সময়টায় দাপট ছিল কালীপুজোর। কলকাতার বেশ কয়েকটা বড় বড় কালীপুজোর উদ্যোক্তা ছিলেন কংগ্রেসি নেতারা! যত বড় কংগ্রেস নেতা তাঁর তত বড় কালীপুজো – এটাই ছিল তখনকার রেওয়াজ! আর এই পূজোতে টাকার সোর্স ছিল সাধারন মানুষ। তাই চাঁদার জন্য যে জোরজুলুম হত সেটা বলাই বাহুল্য!

তো এরকমই এক কালীপুজোর চাঁদা নিতে কিছু চ্যাংড়া টাইপের ছেলে হাজির হয়েছে সেই বামনেতার বাড়িতে। যথারীতি বাড়ির মালিকের পরিচয় ওরা জানে না! পূজোর চাঁদা শুনেই উনি জানিয়ে দিলেন যে, পূজোতে তিনি চাঁদা দেন না কারন উনি কমিউনিস্ট। সাথে এও জানালেন যদি কোনো সমাজকল্যানমূলক কাজ হয় তবে উনি নিশ্চয়ই চাঁদা দেবেন!

কিন্তু চ্যাংড়া ছেলের দল চাঁদা নেবেই! অনেকক্ষন কথা কাটাকাটির পর কালীভক্ত চ্যাংড়া ছেলের দল রেগেমেগে কাঁটা পাইপের ছিটকিনি লাগানো মেশিন বের করে ৭২ বছরের বৃদ্ধ নেতার সামনে ধরল। একটুও না ঘাবড়ে উনি ছেলেগুলোর হাত থেকে বন্দুকটা নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখতে লাগলেন।

তারপর অল্প হেসে বললেন- “পাইপের মাপ তো বোরের সাথে ম্যাচ করছে না! ফুট দশেক গিয়েই তো বেঁকে যাবে! যে লেদ পাইপ কেটেছে আমাকে একবার সেখানে নিয়ে যাবে, মাপজোখ বলে দেব!”

চাঁদা নিতে আসা চ্যাংড়া ভক্তকুলের অবস্থা তখন সঙ্গীন! এ ওর মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। অবশেষে একজন ঢোঁক গিলে জিজ্ঞাসা করল, “কে আপনি?”

বিনম্র ভাবে বৃদ্ধ কমিউনিস্ট নেতা জবাব দিলেন, “চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের কথা শুনেছ? মাষ্টারদা সূর্য সেনের নাম শুনেছ? মাষ্টারদা আমাকে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের কমান্ডার ইন চিফ নিযুক্ত করেছিলেন! আমি গণেশ ঘোষ, চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের কমান্ডার ইন চিফ!”

আজ গণেশ ঘোষের জন্মদিন।।
( সংগৃহীত )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

eleven + three =