দিল্লি থেকে মুকুলকে ফিরতে হয়েছে খালি হাতে, সমৰ্থকরা হতাশ , তাই কী ব্যারাকপুরে বিজেপির রাশ আলগা হচ্ছে, বাড়ছে দলে দলে তৃণমূলে যোগদানের হিড়িক

326

দিল্লি থেকে ফিরতে হয়েছে খালি হাতে, সমর্থকরা হয়ে পড়েছে হতাশ; তাই কি ব্যারাকপুরে বিজেপির রাশ আলগা হয়ে দলে দলে তৃনমূল কংগ্রেসে যোগদানের হিড়িক, উঠছে প্রশ্ন
————————
মুকুল রায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হচ্ছেন বলে বিজেপির অন্দরে তো বটেই রাজনৈতিক মহলেও জল্পনা চলছে। কিন্তু আপাতত সেই সম্ভাবনা দূর অস্ত বলে বাংলার একটি বহুল প্রচারিত সংবাদপত্র দাবি করেছে। এমনকি, ওই সংবাদপত্রের দাবি, তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে মে মাসের শেষে এবং জুনের প্রথমে বৈঠকও করেছেন মুকুল রায়।

ওই সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে, বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব এখনই মুকুল রায়কে কোনও বড় পদে বসাতে রাজি নয়। তার একটি বড় কারণ, তাঁর বিরুদ্ধে ঝুলে থাকা সিবিআই মামলা। সিবিআই প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব দফতরের মধ্যে পড়ে। ফলে সিবিআই অভিযুক্ত মুকুলকে মন্ত্রিত্ব দেওয়া মোদী সরকারের পক্ষে সেটা চাপের। একই কারণে দলে তাঁকে কোনও বড় পদ দেওয়া হলেও, রাজ্য বিজেপির নীচের তলা থেকেও প্রশ্ন উঠতে পারে।

এ দিকে রাজ্য বিজেপিতেও মুকুল রায়কে সেভাবে কোনও দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। করোনা-আমফান ত্রাণ নিয়ে প্রায় সব দায়িত্বই সামলাচ্ছেন দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, লকেট চট্টোপাধ্যায়রা। পরিস্থিতিতে গেরুয়া শিবিরে কোণঠাসা হয়ে আবার তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন মুকুল।

ওই সংবাদপত্রের একটি সূত্র জানিয়েছে, পুরনো দল তৃণমূলের সঙ্গে মুকুল রায়ের অনেকটাই কথাবার্তা এগিয়েছে। এবিষয়ে তাঁরা মুকুল রায়ের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিল। কিন্তু মুকুল অবশ্য সরাসরি সবই অস্বীকার করেছেন। তাঁর কথায়, “এই সমস্ত বাজে খবর। ফালতু খবর।”
তবে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বও মুকুলের সঙ্গে যোগাযোগের কথা উড়িয়ে দিয়েছে।

দুই পক্ষই একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগের কথা এখনও পর্যন্ত নস্যাৎ করলেও তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কয়েকটি বিষয় দেখা যাচ্ছে। যেমন রাজ্যে করোনা মোকাবিলায় বিজেপির অন্য নেতারা যে ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ভূমিকা নিয়েছে। মুকুল রায় সে পথে হাঁটেন নি। তিনি অনেকটাই সেফ খেলেছেন। মুকুল রায় তাঁর বক্তৃতায় শুধুমাত্র নরেন্দ্র মোদী তথা কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকার প্রশংসাতেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রেখেছেন।

প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে দিল্লিতে অমিত শাহর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে মুকুল রায়ের। তাঁর সঙ্গে দিল্লিতে গিয়েছিলেন সল্টলেকের প্রাক্তন মেয়র তথা বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত।

শনিবার কলকাতায় ফিরে তিনি দাবি করেন, “দিল্লিতে অমিত শাহের সঙ্গে আমার আলোচনা হয়েছে। সেখানে রাজ্যের আসন্ন নির্বাচনই ছিল মূল আলোচ্য। দল এই নির্বাচনকে খুব গুরুত্ব দিচ্ছে। বিজেপি খুব ভাল ফল করবে বলে অমিতজি আশাবাদী।”

মন্ত্রিত্ব বা দলে পদ পাওয়া সম্পর্কে মুকুল রায় বলেছেন, “ও সব নিয়ে কোনও কথাই হয়নি। করোনা পরিস্থিতিতে এখন এ সব আলোচনার সময় নয়। তাছাড়া এই পরিস্থিতির জন্যই এখনই মন্ত্রিসভায় রদবদলের কথা ভাবা হচ্ছে না।”

আর এদিকে মুকুল বাবুকে কোনো বড় পদে দেখতে না পাওয়ায় তাঁর কর্মী সমর্থকরা হতাশ। ফলে তাঁরা ইতিমধ্যেই হাটে বাজারে বলতে শুরু করেছে এই দলে কোনো সম্মান নেই। আর সম্ভব নয় এই ভাবে দল করা ফলে অনেকেই ফিরতে চাইছে পুরোনো দলে।

১৪ জুন, রবিবার দেখা গেছে নৈহাটিতে গ্রাম এলাকায় মাঝিপাড়া-পলাশীর নাগদহ, ভটপুকুর ও দাঁড়িয়ালায় প্রায় একশত বিজেপি কর্মী তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেছে।

ওই একই দিনে নৈহাটি শহরে পারহাউস মোড়ে প্রাক্তন কাউন্সিলর সহ প্রায় ২৭২ জন বিজেপি কর্মী তৃনমূল কংগ্রেসে এসেছে।

জগদ্দলেও দেখাগেছে দল পরিবর্তনের ঘটনা। কাউগাছি-১ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের ১০০ বিজেপি কর্মী তৃণমূল কংগ্রেসে এসেছে। এরা সকালেই জেলা তৃনমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি তথা নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিকের হাত ধরে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করে।

শুধু ব্যারাকপুর মহকুমাতেই নয় বিজেপিতে ভাঙন ধরেছে রাজ্যের সর্বত্র। গোবরডাঙ্গা টাউনে বিজেপি প্রভাবশালী পুরাতন নেতা কল্যাণ দত্ত রায়ের নেতৃত্বে ৩০০ কর্মী তৃণমূলে যোগদান করেছে।

আঁটপুর- রাজবলহাটে ১৭০জন বিজেপি কর্মী তৃণমূলে এসেছে।

আরামবাগের আরান্ডি-১ ও আরান্ডি-২ অঞ্চলে বিজেপি ও সিপিএম ছেড়ে ১০০০ নেতাকর্মী তৃণমূলে যোগ দিয়েছে। বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে এলো আরান্ডি-২ জিপি উপপ্রধান শ্রীমন্ত মুখার্জি এবং আরো ৫ সদস্য এবং রঘু দলুই, বাবুলাল মালিক সহ আরো অনেকেই. সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলো বাদল সানা, সীমন্ত রায়, মাধব রায়, শেখ হাসিবুল, শেখ রাজীব, শেখ রাজা সহ আরো অন্যান্য নেতাকর্মীরা।

স্বরুপনগরের বাগলানি জিপি এবং বাগদার সিন্দ্রানী জিপিতে বোর্ড দখল করলো তৃণমূল. বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে এলো ৫ মেম্বার সহ বহু নেতাকর্মী. দলত্যাগীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সিন্দ্রানীর দুই মেম্বার রুপালি বিশ্বাস ও উমা ব্যাপারী.

নদিয়ার চাপড়া ব্লকের হৃদয়পুর জিপিতে ২৫০জন বিজেপি কর্মী তৃণমূলে যোগ দিয়েছে।

বাঁকুড়ার সোনামুখী ব্লক ও শহর তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক কর্মীসভায় বিজেপি ও সিপিএম ছেড়ে ৫০০ পরিবারের ২৪০০ জন তৃণমূল কংগ্রেসে এসেছে।

চারিদিকে একটা দলত্যাগ করার হিড়িক পড়েছে। আর এটা বিজেপির রাজ্য কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই এটা শুরু হয়েছে। নবগঠিত রাজ্য কমিটি নিয়ে বিজেপির পুরোনো কর্মীরা অনেকেই মুখ খুলেছে প্রকাশ্যে।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একদিকে মুকুল অনুগামীরা হতাশ আর অন্য দিকে নবগঠিত রাজ্য কমিটি নিয়ে বিজেপির পুরোনোদের অসন্তোষ পালে হাওয়া লাগতে শুরু করেছে তৃণমূল শিবিরে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

three × three =